শিরোনাম
৫ জুন ২০২৫ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর বাণী
বিস্তারিত
৫ জুন ২০২৫ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর বাণী
পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন এবং সম্পদের অপরিমিত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত, হ্রাস পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। বিশ্বব্যাপী ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯২০ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়েছে যার মধ্যে ৭০০ কোটি টন প্লাস্টিক উর্বর কৃষি জমি ও জলাধারসমূহে পতিত হয়ে প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি, গবাদি পশু ও মানুষের দেহে মাইক্রো প্লাস্টিক প্রবেশ করছে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণি ক্যান্সার ও বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) প্রতিবছরের মতো এ বছরও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস 2025 পালন করছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে Ending Plastic Pollution যার বাংলায় ভাবানুবাদ করা হয়েছে; ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ এবং স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে বীট Plastic Pollution যার বাংলায় ভাবানুবাদ করা হয়েছে; ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনি সময়’। এই দুই স্লোগানই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগি। এ দিবস পালনের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এ বছরও সরকার দেশব্যাপি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিশ্বব্যাপি প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার জন্য United Nations Environment Assembly (UNEA)-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি আর্ন্তজাতিক চুক্তি প্রণয়নের কাজ চলছে। আশা করা যায় এ বছরের মধ্যে এই চুক্তি সদস্য দেশসমূহ কর্তৃক গৃহীত হবে। বাংলাদেশ এই চুক্তি প্রণয়নের প্রক্রিয়াতে সক্রিয়।
২০২১ সালের সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের শহরগুলোতে ২০২৫ সালে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৪৭,০০০ টনে উন্নীত হবে। বড় শহরগুলোতে কঠিন বর্জ্যের প্রায় ১০% প্লাস্টিক বর্জ্য থাকে। ফলশ্রুতিতে ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭০০ টন প্লাস্টিকজাত বর্জ্য সৃষ্টি হবে। এছাড়া সমগ্র দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮,২১,২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়।
বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার ও বিপণন এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বন্ধের লক্ষ্যে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সুপার শপিং স্টোরগুলোতে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য মার্কেট ও শপিংমল থেকে এই ব্যাগ বন্ধের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং ক্লিন-আপ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ অনুসরণে Extended Producer Responsibility (EPR) গাইডলাইন প্রণয়ন ও 3R (Reduce, Reuse, Recycle) Policy লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ০৩(তিন) বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি পণ্যকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ হবে। এই ১৭টি পণ্যের মধ্যে ৩টি পণ্যকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি এবং মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আশা করি সকলের সমন্বিত প্রয়াসে আমরা অচিরেই একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে দেশ ও বিশ্বকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে আপনাদের সকলের সাহায্য প্রয়োজন।
সকলকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ এর শুভেচ্ছা।